Thursday, August 2, 2012


ইনভেস্টমেন্ট

হারাধনবাবু পকেটে হাত দিলেন, একটু খুচুর-মুচুর করলেন। নাহ্‌, নস্যির কৌটোটা নেই। মনটা কিরকম উদাস হয়ে গেলো। নেশাছাড়া পুরুষ মানুষ আর অ্যাটাচ্ড বাথ ছাড়া মাস্টার বেডরুম আসলে অচল। তাছাড়া হারাধনবাবুর দৃঢ় বিশ্বাস নস্যিই একমাত্র নেশা যা থেকে ক্যান্সার হতে পারে না। এ নিয়ে তিনি ফাঁক পেলেই অল্প-বিস্তর পড়াশোনা করবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন। স্টেশন রোডের ওপরে G+9 টা নেমে গেলেই পাড়ার অঙ্কের মাস্টারটাকে পাকড়ে শান্ত নিরিবিলি মন্দারমণিতে কিছুদিন বিজ্ঞান-চর্চা করবেন এরকম প্ন্যান ছকা আছে।

যারা সোদপুর-মধ্যমগ্রাম অঞ্চলে থাকেন তাদের অনেকেই হারাধন বাবুকে চেনে, রীতিমত ভয়-ভক্তিও করে। ৩৩৫ টাকা স্ক্যোয়ার ফিট থেকে শুরু করে আজ ৩৭০০ টাকা স্ক্যোয়ার ফিট, আদি গঙ্গা দিয়ে জল তো আর কম গেলো না। তারও আগে কে সি পালের কালো ছাতা মাথায় দিয়ে সরকারী চাকুরেদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে কন্ট্রাক্টরি করে দোতলা তুলে দিতেন, এখন জেট-ব্ল্যাক টয়েটো তাঁর ক্লায়েন্টদের আনতে যায়। সঠিক সময়ে কাস্তে ধরে একের পর এক ৩ কাঠা, ৫ কাঠা, ১২ কাঠা দখল করে গেছেন। ফুলের ঘায়ে কাস্তে যেবার মুচ্ছো গেলো, সে বছরেও হারাধন বাবুর কোনো অসুবিধে হল না। বড়ো বড়ো কোম্পানীতে রিসেশন শুধুই নিচের তলায় আঘাত হানে, প্রোমোটারিতেও সেরকম। G+3 ছাড়িয়ে উঠতে পারলেই হ্যারিকেন, কাস্তে, ফুল, সাইকেল এগুলো সবই মায়া।

মাস দু-তিন হল হারাধনবাবু একটা পাইরেটেড ডিভিডি কিনেছেন, বাবা কালুদেবের যোগা। আজকাল ঘুম থেকে উঠে সেটা চালিয়ে চোখ বন্ধ করে একটু বিশ্রাম নেন। এর আগে শিল্পা শেঠীর একটা ওরিজিনাল যোগা ডিভিডি ছিল, সেটা অবশ্য চোখ খোলা রেখে দেখতে হতো। পাড়ার কাউন্সেলর গেলোবার পার্টির চাঁদা কালেক্ট করবার সময় নিয়ে গেলেন, আর ফেরত দিলেন না। গেঁটে বাতের জন্য শিল্পা শেঠীর যোগা নাকি মোক্ষম দাওয়াই। এই সেদিন কাউন্সেলর শালার জন্য একটা ফ্ল্যাটের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছিলেন, ডিভিডিটার খুব প্রশংসা করে গেলেন, আজকাল বেশ ভাল আছেন, চাঙ্গা লাগছে।

“স্যার, আসবো?” হারাধন চোখ তুলে তাকালেন। এসি ঘরের কাঁচের দরজা খুলে কাজল মাস্টার উঁকি দিচ্ছে। সকাল সকাল নস্যি না পেয়ে এমনিতেই মেজাজটা শুকিয়ে আছে, তারপরে আবার অঙ্কের মাস্টার। আজকের দিনটা খারাপই যাবে। কাজল মাস্টার পাড়াতেই এক কামরার ঘরে ভাড়া থাকে। সেই ঘরটাতেই টিউশনি পড়ায়। প্রতি মাসে পাঁচ হাজার করে সেভিংস্‌। ব্যাঙ্কে মোট সাড়ে চার লাখ টাকা জমেছে, তাতে যদি কোনো ফ্ল্যাট বুক করা যায়। 

হারাধন শুনে হাসলেন। দুঃখের হাসি, ড্রিমস্‌ হারাধনে এখন মিনিমাম দাম যাচ্ছে পঁয়ত্রিশ লাখ। প্রোজেক্টে যা ইনভেস্ট করা হয়েছিল, সবাইকে দিয়ে-থুয়েও, তার সাড়ে-চার গুণ লাভ হয়ে গেছে। মাস্টারকে তিনি পছন্দ করেন। নিজে ক্লাস এইটের বেশি এগোতে পারেন নি, মাস্টার অঙ্কে এম এস সি। হারাধন অঙ্কের একটাই জিনিস বোঝেন, সেটা হোলো শতকরা হিসাব। রেজিস্ট্রেশনের সময় ৫%, পাইলিং কমপ্লিট হলে ১০%। সোজা হিসাব - ব্যাঙ্কে দিতে হয় ৮%, কাস্তে ২%, ফুল ২%, আর হারাধনের থাকে ৩%। ইচ্ছে করলে হারাধন ফ্ল্যাটটা এমনিতেই দিয়ে দিতে পারেন, কিন্তু দেবেন না। কারণ তিনকড়ি হালদারের বারণ আছে। তিনকড়ি হারাধনের স্বর্গত পিতা। 

ড্রিমস্‌ হারাধন, হারাধনের লেটেস্ট প্রোজেক্ট। লঞ্চ করার সময় নাম ছিলো হারাধন ড্রিমস্‌ - মানে, হারাধন স্বপ্ন দেখে। পরে রেজিস্ট্রী করার দিন হঠাৎ মনে পড়লো, দিদির মুখে শুনেছিলেন, বাবার বেশি বয়েসের পুত্রসন্তান তিনি। অনেক পুজো করে, মাদুলি বেঁধে, তবে স্বপ্নাদেশে হারাধনকে পাওয়া গেছিলো। হারাধন প্রোজেক্টের নামটা পালটে দিলেন - ড্রিমস্‌ হারাধন, স্বপ্নের হারাধন। ফর্মে স্পেশাল ক্যারেক্টার লেখার সুযোগ না থাকায় apostrophe টা দেওয়া যায় নি।

তিনকড়ি পূর্বপুরুষের মুদির দোকান চালাতেন। হারাধনকে বিশেষ কিছু দিয়ে যেতে পারেন নি। শুধু ওই মুদির দোকানটা, এখন যেটা ভেঙ্গে তিনকড়ি প্লাজা হয়েছে। আর সাথে মৃত্যুশয্যায় এক পিস জ্ঞান, “ফ্রি বলে কিস্‌সু হয় না, কাউকে ফ্রিতে কিছু দিবি না।” ফ্রিতে জিনিসপত্র দিতে দিতে মুদির দোকান লাটে তুলে দেবার পর’ই বোধহয় তার এই জ্ঞানার্জন ঘটেছিল। চোখ বুজলেই হারাধন দেখতে পান, বাবা বুক চেপে বসে আছেন। দোকানের হিসেবের খাতা মেলাচ্ছিলেন। ধার-বাকির লিস্টের যোগফল মেলাতে মেলাতে হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক। চোখগুলো বড়ো বড়ো হয়ে যেন ফেটে পড়ছিলো।
মাস্টার এখন তার থেকেও বড়ো বড়ো চোখ করে সামনে বসে আছে। হারাধন আর সহ্য করতে পারলেন না। হাত নেড়ে বিদায় করলেন, “না হে, মাস্টার হবে না, তুমি বরং এখন এসো। ফ্রিতে ফ্ল্যাট হবে না। বাড়িতে খুঁজে দেখো, যদি কিছু জিনিস জামিন রাখতে পারো। কিছু পেলে-টেলে আবার এসো’খন।”

লাল ফুল ফুল টিশার্ট পরা এক ইঞ্জিনিয়ার এসেছে, সাথে তার কনভেন্ট-এডুকেটেড বৌ। ইঞ্জিনিয়ারের বুকের ওপরে কড়া হলুদ দিয়ে লেখা - ড্রিঙ্ক বিয়ার, সেভ মিল্ক। সবুজের একবার মনে হল জিজ্ঞেস করে, আপনি কি ইস্টবেঙ্গলের সাপোর্টার। সবুজকে হারাধনবাবু রেখেছেন, ছোটখাটো ফাইফরমাশ খাটার জন্য। ও মধ্যমগ্রাম স্টেশনের পাশে লাইনের ধারে নোনাঝিল ঝুপড়িটায় থাকে আর পাড়ার দেশবন্ধু স্মৃতি বিদ্যালয়ে ক্লাস নাইনে পড়ে। ফরেন থেকে মাঝে মাঝে দুয়েকটা বেশি ইঞ্জিরি কপচানো ক্লায়েন্ট আসে, তাদেরকেও মাঝে-মধ্যে সামলায়। ইঞ্জিনিয়ারের বৌয়ের টি শার্টটা হাল্কা নীল, তার বুকের ওপরও কি জানি একটা চকচকে রুপোলী লেখা। লেখাটা ভাঁজে পড়ে গেছে বলে ভালো পড়া যাচ্ছে না। সবুজ পড়তে গিয়েও অস্বস্তিতে চোখ নামিয়ে নিলো। ইঞ্জিনিয়ার ওদিকে ঘন ঘন তোয়ালে-রুমাল দিয়ে মুখ মুছছে। টয়েটো থেকে নেমে হারাধন কন্সট্রাকশনের অফিসে ঢুকতে ঢুকতেই সে ঘেমেনেয়ে অস্থির।

ঘরে ২ টো এসি চলছে। ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। এসি ২টোর মধ্যে বিবেকানন্দের একটা হাফ-বাস্ট ছবি, হলোগ্রাম করে লেখা - “Take up one idea. Make that one idea your life – think of it, dream of it, live on idea. Let the brain, muscles, nerves, every part of your body, be full of that idea, and just leave every other idea alone. This is the way to success. তার নিচে প্রোপোজ্‌ড দশ’তলা বাড়ির সম্ভাব্য ছবি, তারও নিচে ন্যাচারাল ওয়াটার বডি। হারাধন যখন অ্যাডজাস্টেব্‌ল চেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসেন, মাথাটা আস্তে আস্তে ওই ন্যাচারাল ওয়াটারে ডুবে যায়। 

প্ল্যানটা অনেক ভেবে চিন্তে করা। আগে একটা সমুদ্রে সানসেটের ছবি ছিল, হেলান দিয়ে বসলে হারাধনের মাথার চারপাশ দিয়ে লাল-হলুদ আভা বেরোতো। সবুজ যেদিন থেকে বললো, আপনাকে আর স্বামীজিকে দেখতে একদম একরকম লাগছে, দুজনেরই মাথার পাশ দিয়ে একশো আশি ডিগ্রী জ্যোতি বেরোচ্ছে, সেদিনই হারাধন মোড়ের বিশুর দোকান থেকে সুইৎজারল্যান্ডের একটা পোস্টার কিনে এনে সাদা পাহাড় গুলো কাটিয়ে নিয়ে, সানসেটটাকে ন্যাচারাল বডি করে দিলেন।
হারাধন আস্তে আস্তে ঘরে ঢুকলেন, এন্টিটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট। ক্লায়েন্টকে ওখানেই পেড়ে ফেলতে হয়। নতুন প্রোমোটারদের আদব-কায়দা দেখলে আজকাল তাঁর মহাজ্বলুনি হয়। ল্যাপটপ অন করে, গুগ্‌ল ম্যাপ খুলে-টুলে একাকার কান্ড। অর্জুনের হাতে এ-কে-৪৭। দেখেশুনে ইচ্ছে হয় ওই কাজল মাস্টারের পাশে প্রোমোটারির কোচিং খুলতে, বা নিদেনপক্ষে একটা বই - ‘প্রোমোটারি ফর ডামিজ্‌’। প্রোমোটারজাতির একটাই চিরন্তন অস্ত্র – সেটা হলো ফোন, এখন মোবাইল। নিজের কোর কম্পিটেন্স ছেড়ে অন্য অস্ত্র হারাধন মাস্টার ধরেন নি, ধরবেনও না। 

কানে সাদা মোবাইলটা আলগোছে ধরে হারাধন গম্ভীরভাবে আরামকেদারায় বসলেন, তারপর অদৃশ্য ক্লায়েন্টের উদ্দেশ্যে, “না না, আগের প্রোজেক্টটা তো সব সোল্ড আউট। ড্রিমস্‌ হারাধনে এখনও একটা বোথ-সাইড-সাউথ-ওপেন রয়েছে, রেডি টু মুভ ইন। ২টো পার্টির সাথে অলরেডি কথা চলছে। আপনি কালকের মধ্যে ২০ লাখের একটা চেক নিয়ে চলে আসুন, দেখছি কদ্দুর কি করা যায়।” এরকম গুল প্রোমোটারদের প্রায়ই দিতে হয়। ওটা তেমন দোষের নয়। বোথ-সাইড-সাউথ-ওপেন শুনে প্রথম দিকে কিছু কিছু ক্লায়েন্ট হাসতো, তবে ফ্ল্যাটের দাম শুনেই তাদের দাঁতের পাঁটি আপনা থেকে বন্ধ হয়ে যেত। আজকের কথাটা অবশ্য একেবারে ফালতু নয়, সত্যিই এক খানা ফ্ল্যাট এখনও ফাঁকা রয়েছে। ২টো পার্টি অবশ্য নেই, তবে সে আর আসতে কতক্ষণ।

ইঞ্জিনিয়ার বেশি বকে, তার শুধু প্রশ্ন এ বিল্ডিং কাস্তে না ঘাস – কাদের সিমেন্ট দিয়ে তৈরী, উনি নাকি কোন ব্লগে পড়েছেন এ রাজ্যে জোর করে ভুষি মেশানো মেটেরিয়াল দিয়ে হাইরাইজ তৈরী করতে বাধ্য করা হয়েছে। হারাধনের ইচ্ছে করছে ইঞ্জিনিয়ারকে চেয়ারশুদ্ধু ল্যাং মেরে ফেলে দিতে। আরে, তুই ভুষির দাম জানিস? ভুষি মেশালে লাভ হবে না ক্ষতি হবে, তার কোনো ধারণা আছে? তুই কম্পিউটার পারিস, সেইটাই কর। হারাধন ব্যবসায়ী মানুষ, জানেন বাজে মেটেরিয়াল হলে পরের প্রোজেক্টে আর বুকিং হবে না, লস হয়ে যাবে। তাই অনেক ভেবে চিন্তেই ইনভেস্ট করেছেন। কাস্তে-ঘাস দুপক্ষ’কেই তিনি হাতে হাতে টাকা দিয়ে নগদ বিদেয় করেছেন, বিল্ডিং ভাল সিমেন্টেই তৈরি হয়েছে। হাতে হাতে টাকা দেওয়ার একটা স্পেশাল টেকনিক আছে। হারাধন নিচের মহলে সরাসরি টাকা দেন না। সব সময় একদম ওপরের মহলে টাকা দেন, নিচের লোকেরা ওপরের হাত থেকে পায়। ভারতবর্ষে নিচের লোকের ধর্মই হচ্ছে তারা ওপরের হাত থেকে যাই টাকা পাক, খুশি হয়, ভাবে প্রাপ্যের অতিরিক্ত পাচ্ছে।

ইঞ্জিনিয়ারকে তিনি অবশ্য এতো কিছু বললেন না। শুধু বললেন, দেখুন একটাই ফ্ল্যাট অ্যাভেলেব্‌ল আছে। কন্সট্রাকশন কমপ্লিট, সামনের মাসে ডেলিভারি। নেবেন কিনা ভালো করে ভেবে দেখুন। নমস্কার। এবার ইঞ্জিনিয়ারের বৌয়ের প্রশ্ন – “আচ্ছা দাদা, ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে এটা কেমন হবে? সামনের রাস্তাটা আরো চওড়া হবে তো? ও তো বস্টনে থাকে। এই ফ্ল্যাটটায় কোনোদিন থাকবো না, ইনভেস্টমেন্টের জন্য কনসিডার করছি। পাঁচ বছর বাদে ভালো দাম পাব তো?” হারাধনের মাথার ভিতরটা দাউদাউ করে জ্বলে গেলো, তিনি কি সর্বদ্রষ্টা নাকি? পাঁচ বছর পরে যে আসবে সে তার হিসেব মত কাজ করবে, রাস্তা কদিন পরে চওড়া হবে কিনা তা বলতে পারলে তিনি আজ মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে থাকতেন, বসে বসে ফ্ল্যাট বেচতেন নাকি? হারাধন মনে মনে ইঞ্জিনিয়ারকে অল্টারনেটিভ্‌লি মধ্যমা আর তর্জনী দিয়ে গাঁট্টা মারতে মারতে হাসি মুখে বললেন, “হবে, হবে। নিশ্চয়ই হবে।” এটা একটা কবিতার লাইন থেকে টোকা। “আজ নয়/ কাল নয়/ জেনো একদিন হবে” - কাজল মাস্টার মাঝে মাঝে ভোরবেলা আবৃত্তি করে। নিউ টাউনের কোনো বড়ো প্রোমোটারের লেখা কবিতা মনে হয়, ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অভাবে প্রোজেক্ট ডিলে আর পকেট ঢিলে হয়ে যাচ্ছে বলে বহু দুঃখে লিখেছে। মাস্টারকে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে লাইনগুলো কার লেখা।

যাওয়ার সময় ইঞ্জিনিয়ারের পায়ে ঠক্‌ করে কি একটা লাগলো। ইঞ্জিনিয়ার নিচু হয়ে নস্যির কৌটোটা হাতে নিতেই, ইঞ্জিনিয়ারের রূপোলী বৌ ছিট্‌কে উঠলো। “জিমি, ইউ ন্যাস্টি। হাউ কুজ্‌ ইউ টাচ্‌ দিস?”

হারাধন একটিপ নস্যি নিয়ে, নাকটা সশব্দে রুমালে ঝেড়ে মেরুদণ্ড সোজা করে বসলেন। এবার একটা হাঁচি আসবে। কতো বড়ো বড়ো বিজনেস ডিল এনে দিয়েছে এই হাঁচি। যে কোনো বড়ো কাজে হাত দেওয়ার আগে, কোন জমিতে ইনভেস্ট করবেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে হাঁচিটা মাস্ট। হাঁচি হল। হারাধন পাশের চায়ের দোকান থেকে কাজলকে ডেকে পাঠালেন। “শোনো মাস্টার, তুমি তো অনেক অঙ্ক শিখেছো। অঙ্ক ছাড়া মনে হয় তোমার জামিন দেওয়ার মতো কিছু নেই। এবার আমি তোমায় একটা অঙ্ক দিই। পারো কিনা দেখো।” কাজল মাস্টারের চোখদুটো সেই আবার বড়ো হতে শুরু করেছে, যন্ত্রণা।

হারাধন থেমে থেমে স্পষ্ট করে বলতে থাকলেন, “আমার দৌড় শতকরা পর্যন্ত, তাই শতকরার অঙ্ক। সবুজ সামনের বার মাধ্যমিক দিচ্ছে। কাল থেকে ওই ফ্ল্যাটটায় তুমি সবুজকে পড়াও। একশোর থেকে যত কম পাবে, ফ্ল্যাটের দামের শতকরা তত ভাগ তোমায় দিতে হবে। মানে অঙ্কের সোজা হিসেব, ও ৮৮ পেলে তুমি ১২% দিচ্ছো। আর যদি ১০০ তে ১০০ বাগাতে পারো, তাহলে ও ফ্ল্যাট এমনিই তোমার। নাও, এবার এসো।” কাজল মাস্টারের চোখ দুটো দমাস করে আরো বড়ো হয়ে প্রায় নিঁখুত গোল হয়ে গেলো।

কাজল চলে যাওয়ার পরে, এক টিপ নস্যি নিয়ে হারাধন ইঞ্জিনিয়ারকে ফোন লাগালেন, “দাদা, একজন খুব বড়ো ইনভেস্টর এইমাত্র ফ্ল্যাটটা বুক করে নিলেন। কি বলছেন? ও হ্যাঁ, হ্যাঁ, উনি একদম সিওর যে ভালো রিটার্ন পাবেন। আপনি বরং পরের প্রোজেক্টটার জন্য ওয়েট করুন”।
আঃ, আরেকটা হাঁচি হবে হবে করছে।